মন্ত্রী হলেন বিএসসি, কামাল, ইয়াফেস; প্রতিমন্ত্রী তারানা, নুরুজ্জামান
জিটিবি নিউজ ঃ বর্তমান সরকারে নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। বর্তমান দুই প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ইয়াফেস ওসমানও পূর্ণ মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন।
গতকাল ঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে শপথ নেন সংসদ সদস্য তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান হয়। আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত আয়োজনে দরবার হলে অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে তাদের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
গত কয়েকদিন ধরে মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন চললেও কারা কারা শপথ নিচ্ছেন, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছিল না। মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য রাখা চেয়ারে নাম দেখে পাঁচজনের নাম নিশ্চিত হওয়া যায়।শপথ নিতে বিকেল ৪টার দিকে বঙ্গভবনে ঢোকেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। তার এক ঘণ্টা পর একে একে যান নুরুজ্জামান, তারানা হালিম ও ইয়াফেস ওসমান। সাড়ে ৫টার দিকে ঢোকেন আসাদুজ্জামান কামাল।
চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বিএসসি সোমবারই জানিয়েছিলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাকে টেলিফোন করে ‘তৈরি’ থাকতে বলেছেন।সানোয়ারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম বিএসসি বেশ কিছু কাল ধরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরোধী শিবিরের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি নৌকা প্রতীকে বন্দর নগরীর একটি আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনে ওই আসনটি জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দিতে হয় তাকে।নবম সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে নুরুল ইসলাম বিএসসি সাংবাদিকদের বলেন, আমি যে দায়িত্ব পাব, সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করব।বিএসসির পাশাপাশি নারী আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিমও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে টেলিফোন পাওয়ার কথা একদিন আগে জানান। দশম সংসদে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য তারানা হালিম সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার আত্মীয়।বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৈশোরেই পরিচিতি পাওয়ার পর তারানা হালিম অভিনেত্রী হিসেবেও নাম কুড়ান। তারানা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এনিয়ে দ্বিতীয়বার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে আমার শ্রম, মেধা, শিক্ষা সব কিছু দিয়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করবো। মন্ত্রিসভায় তার স্থান পাওয়াকে নারীর ক্ষমতায়নের ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছেন তারানা। শিল্প আমার অন্তরের বিষয়, আর এটা বিশ্বাসের বিষয়। এমন কাজ করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী যে আমাকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেননি, এটা প্রমাণ করতে চাই।
লালমনিরহাট-২ আসন থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ এবারই প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৫০ সালের ৩ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া এই রাজনীতিক স্নাতক ডিগ্রিধারী। লালমনিরহাট-২ আসনে সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য ওই জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার করিমপুরের কাশীরাম গ্রামের বাসিন্দা।
গত বছর শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং স্থপতি ইয়াফেস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। রবদবদলে দুজনের উত্তরণ ঘটল।
ইয়াফেস ওসমান গত সাত বছর ধরে টেকনোক্র্যাট হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী না থাকার মধ্যে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তেজগাঁও আসনের সংসদ সদস্য কামাল। গত বছর সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এটাই কার্যত প্রথম রদবদল।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। ওই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি এ এইচ মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং নজরুল ইসলামকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এরপর গত দেড় বছরে আর কোনো পরিবর্তন আনেননি শেখ হাসিনা।
এর মধ্যে হজ নিয়ে বিতর্কিত এক মন্তব্যের কারণে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গত বছরের ১২ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েন। ওই পদ এখনও শূন্য।গত ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয় মন্ত্রিসভারই আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভায় ২৯ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী ছিলেন। নতুন তিনজনকে নিয়ে মন্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে।